#

#

শীতলকুচি কলেজের ছাত্রী গণধর্ষণের কান্ডে গ্রেফতার আরও ২ অভিযুক্ত, সাফল্য পুলিশের

 অবশেষে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শীতলকুচি গণধর্ষণকাণ্ডে বাকি দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল শীতলকুচি থানার পুলিশ। এর আগে জমির হোসেন নামে এই ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত এক আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শিলিগুড়ি থেকে অভিযুক্ত রাসেল মিয়া ও ফিরোজ আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নির্যাতিতা কলেজ ছাত্রীর অভিযোগ,গত মঙ্গলবার শীতলকুচি কলেজে যাওয়ার সময় কিষাণ মান্ডি সামনে পূর্বপরিচিত জমির এবং তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। কলেজে এগিয়ে দেবে বলে তাদের গাড়িতে উঠতে বলে। সরল বিশ্বাসে ওই দুই পূর্বপরিচিতের গাড়িতে উঠে ওই কলেজছাত্রী। এরপর তাকে কলেজে না নিয়ে গিয়ে তারা বামন ঢোকা এলাকার জমির পিসির বাড়িতে তাকে নিয়ে যায়। সেখানে রাসেল আগে থেকেই উপস্থিত ছিল। ফাঁকা বাড়ি পেয়ে ধর্ষণ মূল অভিযুক্ত জমির। ধর্ষণ কাণ্ডের ভিডিও তুলে নেয় রাসেল ও ফিরোজ।

ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ওই কলেজছাত্রী। তাকে জোর করিয়া গর্ভ নিরোধক ঔষধ খাইয়ে জখম অবস্থায় শীতলকুচি গার্লস স্কুলের সামনে রেখে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। নির্যাতিতা কলেজছাত্রী অভিযোগ জানানোর পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মুল অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও বাকি দুজন পলাতক থাকে।

বাকি দু’জনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে তৃণমূল-বিজেপি বামপন্থী দল এসএফআই ডিওয়াইএফআই,তৃণমূল ছাত্র পরিষদ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহ অন্যান্য সামাজিক সংগঠন এর তরফ থানাতে স্মারকলিপি দিয়ে পুলিশের উপর চাপ বাড়ানো হয়। গতকাল পর্যন্ত বারোটি স্মারকলিপি জমা পড়ে গণধর্ষণ কাণ্ডের দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে। অবশেষে এদিন তারা গ্রেপ্তার হয় শিলিগুড়ি থেকে।

শীতলকুচি থানার ওসি মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, এই ঘটনায় তিন অভিযুক্তই গ্রেফতার হল। এদিকে গণধর্ষণকাণ্ডে বাকি দুজন ফিরোজ এবং রাসেলকে গ্রেপ্তারের দাবিতে এর আগে মিছিল করে শীতলকুচি থানায়, বিডিওকে স্মারকলিপি দেয় বিশ্ব রাজবংশী উন্নয়ন মঞ্চ। শীতলকুচি থানার সামনে এসে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখায় বিশ্ব রাজবংশী উন্নয়ন মঞ্চ। এছাড়া মিছিল করে শীতলকুচি থানা ও শীতলকুচির বিডিও কে স্মারকলিপি দেয় ছাত্র-শিক্ষকরা।

শীতলকুচি র বিডিও সোফিয়া আব্বাস বলেন, স্মারকলিপি পেয়েছি, পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।

শীতলকুচি থানার ওসি মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে বাকিদের গ্রেফতার করা হলো। অন্যদিকে একই দাবিতে রবিবার মাথাভাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তৃণমূলের এসসি এসটি ছেলের মাথাভাঙা শাখার সদস্যরা। সোমবার সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের আইনি সহযোগিতা না করার জন্য মাথাভাঙ্গা বার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে স্মারকলিপি দিলেন তারা।

তাছাড়া অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গ জেলার পক্ষ থেকে গণধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মাথাভাঙার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।শীতলকুচি কলেজ ছাত্রী গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বেশ কয়েকদিন সরগরম ছিল গোটা শীতলকুচি সহ মাথাভাঙা এলাকায়। পুলিশের উপর চাপ ছিল। কিন্তু পুলিশ বসে থাকেনি ঘটনার একদিন বাদেই মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার করে। পরবর্তী সময়ে পুলিশ লাগাতর তদন্তে নামে এবং তল্লাশি শুরু করে। প্রত্যেকদিন বিভিন্ন সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ডেপুটেশন মিছিল ইত্যাদি হয়েছে। অবশেষে পুলিশের তৎপরতায় ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি ২ অভিযুক্তকে শিলিগুড়ি থেকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয় পুলিশ। পুলিশের এই তৎপরতায় কে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বুদ্ধিজীবীরা।

এ বিষয়ে মাথাভাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত শর্মা বলেন, ধৃতদের আজ মাথাভাঙ্গা আদালতে তোলা হবে, এবং অভিযুক্তদের পুলিশি রিমান্ডে চাওয়া হবে। এখন দেখার বিষয় গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ধারায় মামলা রুজু হয় এবং তাদের কি ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় এটাই এখন দেখার বিষয়। সেদিকেই তাকিয়ে আছে শীতলকুচি সহ গোটা কোচবিহার জেলার মানুষ। সকলেই চাইছে অভিযুক্তদের ফাঁসি হোক।